হালিম মোঃ জয়
আলিমদের থেকে সাধারণ মুসলিমদেরকে বিচ্ছিন্ন করা আর আলিমদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করাই বর্তমানে কারো কারো দাওয়াতের লক্ষ্য হয়ে গেছে। প্রায় সর্বজন স্বীকৃত আলিমদেরকে আজ মুরজিয়া ট্যাগ লাগিয়ে অগ্রহণযোগ্য করার হীন অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।  উম্মাহর প্রায় সকল জীবিত ও মৃত আলিমকে সমালোচিত করা হচ্ছে জনসম্মুখে।
.
যারা এমন করছে তাদের উদ্দেশ্য কী হতে পারে? তাদের উদ্দেশ্য একটিই আর তা হলো, সহীহ সুন্নাহপন্থি আলিমদের থেকে যুবকরা যেনো মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা জানে, যতদিন মানুষ উপরিউক্ত আলিম ও সালফে সালিহীনের মানহাজের অনুসরণকারী আলিমদের কাছ থেকে ইলম নিবে ততদিন তারা মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাই তারা সর্বাগ্রে মুসলিমদের কাছে আলিমদেরকে ভিলেন হিসাবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ তারা জানে না, প্রতি যুগেই তাদের মত ফিতনা সৃষ্টিকারীরা আহলুস সুন্নাহ-এর আলিমদের সমালোচিত করতে চেয়েছে। এখনো চাচ্ছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি, হবেও না, ইনশাআল্লাহ।
.
আলিমদের থেকে সাধারণ মুসলিমদের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরাতে পারলে তাদের বিষ মিশানো ভ্রান্ত মতবাদ সাধারণ মুসলিমদেরকে গিলানো সহজ হবে। তাই তারা সবার আগে আলিমদেরকে অগ্রহণযোগ্য প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এই পর্যায়ে তারা কিছু অতি আবেগী মুসলিম ভাইবোনদেরকে তাদের সেই বিষ খাওয়াতে সক্ষম হয়েছে। আলিমদের থেকে সাধারণ মুসলিমদের বিশেষ করে যুবসমাজকে বিমুখ করার এই অপচেষ্টা সফল হলে মানুষ দ্বীন শিখতে আর আলিমদের কাছে যাবে না। আলিমদের গালিগালাজ করে দূরে থাকবে। আলিমদের সম্মানহানী করাকে তুচ্ছ মনে করবে। এভাবে তারা নিজেরা বিভ্রান্ত হবে আর অন্যদেরও বিভ্রান্ত করবে। এখন তারা তা-ই করছে।
এমত:বস্থায় তাদের এই নতুন মোড়কে পুরোনো ফিতনার মোকাবেলায় আহলুস সুন্নাহর আলিমদের আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। আলিমদের সুহবতে থাকতে হবে। বেশি বেশি কুরআন-সুন্নাহ অধ্যয়ন করতে হবে। সালফে সালিহীনের মানহাজ মোতাবেক কুরআন-সুন্নাহ বুঝতে হবে। সেটাই সঠিক বুঝ।
✍🏻 ইমাম মালিক (রহ.) কত সুন্দরই না বলেছেন, “উম্মাহর শেষযুগের লোকজনও যদি সংশোধন হতে চায় তাহলে তাহলে তাদের সেই নীতি গ্রহণ করতে হবে যে নীতি প্রথমযুগের লোকজন (সালাফগণ) গ্রহণ করেছিলেন”। তিনি আরো বলেছেন, “এই কবরওয়ালা (মুহাম্মাদ সা.) ছাড়া দুনিয়ার প্রত্যেকের কথাই গ্রহণও করা যেতে পারে আবার বর্জনও করা যেতে পারে”। তাই কারো জন্যই উচিত হবে না, কোনো একজন বা দুইজন আলিমকে অভ্রান্ত মনে করে তার সকল কথা প্রশ্নহীনভাবে মেনে নেয়া। কোনো আলিমের কোনো একটি দুটি বিষয়ে ভুল হতে পারে। ইতোপূর্বে বহু আলিমের এমন হয়েছে। তাই বলে কি আমরা তাদের সকলকে বর্জন করবো? অবশ্যই না।
✍🏻 সালাফগণ বলেছেন, মু’মিন সবসময় তার ভাইয়ের কোনো দোষ পেলে তার জন্য ওযর তালাশ করে আর মুনাফিক সবসময় তার ভাইয়ের দোষ পেলে তার পতন কামনা করে। (ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, খ. ২, পৃ. ১৭৭)
ভেবে দেখুন,  যুবসমাজের মনে যদি আলিমদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ তৈরি করা যায় তাহলে মুসলিম সমাজে আর কোনো শৃঙ্খলা থাকবে না। যে যার মত দ্বীন বুঝবে আর তা অনুসরণ করবে। আর এর মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। কোন কাজে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ আর কোন কাজে অকল্যাণ তা তো আলিমরাই বেশি জানেন, বেশি বোঝেন। তাই তাদের চেয়ে অধিক কল্যাণ-বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলে বিপদ বাড়বে। কোনো আলিমের দুয়েকটা ভুলের কারণে যদি তাকে বর্জন করতে হয় তাহলে দুনিয়ায় আল্লাহর রাসূলের পরে আর কারো উপরে আস্থা রাখার সুযোগ থাকবে না। যারা আলিমদের সমালোচনাকে তাদের পেশা আর নেশা বানিয়ে নিয়েছে তারা নিশ্চিত বিভ্রান্তির পথে আছে। তারা যে পথে আছে সে পথ সালফে সালিহীনের পথ নয়। সে পথ প্রবৃত্তির অনুসরণের পথ।
.
আজকের যুবসমাজ এসব আলিমদের ইলমী খিদমাতের কথা, ত্যাগের কথা জানে না বিধায় তারা কারো কারো কিছু মুখরোচক কথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাদের আপত্তির বিষয়গুলোতে যদি তারা এসব আলিমদের ফাতাওয়াগুলো দেখতো তাহলে তারা কখনই এসব আলিমদের বিরোধিতা ও সমালোচনায় লিপ্ত হতো না। মুসলিম সমাজের কাছে বিশেষ করে যুবসমাজের কাছে সালফে সালিহীনের মানহাজ ও কালের ধারাবাহিকতায় দীনের খিদমতে তাদের ত্যাগ ও অবদান উপস্থাপন করা দরকার। তাহলেই শুধু মুসলিম সমাজ সঠিকভাবে সঠিক ব্যক্তি থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারবে। নতুবা শুধু বিভিন্ন ফেসবুক মুফতী, গুগল মুজতাহিদ আর ইউটিউব আল্লামার কাছ থেকে জ্ঞান নিতে গিয়ে নিজে বিভ্রান্ত হবে আর উম্মাহকে বিভ্রান্ত করবে।
উম্মতের এই ক্রান্তিকালে আমাদের বোধোদয় হউক।